কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার উপায় ২০২৫- বিস্তারিত গাইড
কাঠের আসবাবপত্র ঘরের সৌন্দর্য এবং আভিজাত্যের প্রতীক। যুগ যুগ ধরে কাঠের আসবাবপত্র মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে, সময়ের সাথে সাথে ধুলোবালি, ময়লা এবং দাগের কারণে এদের সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যেতে পারে।
২০২৫ সালে এসে, আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে আপনার মূল্যবান কাঠের আসবাবপত্রকে কিভাবে পরিষ্কার এবং যত্ন সহকারে রাখবেন, তার একটি বিস্তারিত গাইড এখানে দেওয়া হল। এই নির্দেশিকাটি অনুসরণ করে, আপনি আপনার আসবাবপত্রকে নতুনের মতো ঝকঝকে রাখতে পারবেন এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কারের প্রস্তুতি
আসবাবপত্র পরিষ্কার করার আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া অপরিহার্য। সঠিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করে যে পরিষ্কার প্রক্রিয়াটি কার্যকর এবং আপনার আসবাবপত্রের কোনো ক্ষতি হবে না।
- সরঞ্জাম সংগ্রহঃ প্রথমে, পরিষ্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলি যেমন - নরম ব্রাশ, মাইক্রোফাইবার কাপড়, হালকা গরম জল, কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি ক্লিনার, এবং পালিশ সংগ্রহ করুন। যদি বিশেষ দাগ তোলার প্রয়োজন হয়, তবে সেই অনুযায়ী সরঞ্জাম ও ক্লিনার সংগ্রহ করুন।
- ধুলো ঝাড়াঃ পরিষ্কার করার প্রথম ধাপ হল আসবাবপত্রের উপর জমে থাকা ধুলো ঝেড়ে ফেলা। একটি নরম ব্রাশ বা শুকনো মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করে আলতোভাবে ধুলো পরিষ্কার করুন। কর্নার এবং কারুকার্য করা অংশে জমে থাকা ধুলো পরিষ্কার করার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন।
- স্থান তৈরিঃ আসবাবপত্র পরিষ্কার করার জন্য পর্যাপ্ত স্থান তৈরি করুন। যদি সম্ভব হয়, আসবাবপত্রটিকে ঘরের বাইরে বা খোলামেলা জায়গায় নিয়ে যান। যদি সরানো সম্ভব না হয়, তবে চারপাশের জিনিসপত্র সরিয়ে দিন, যাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারেন।
- পরীক্ষা করুনঃ পুরো আসবাবপত্রে ক্লিনার ব্যবহার করার আগে, ছোট এবং অপ্রকাশিত একটি অংশে ক্লিনার পরীক্ষা করে দেখুন। এটি নিশ্চিত করবে যে ক্লিনারটি কাঠের ক্ষতি করছে না বা রঙের পরিবর্তন করছে না।
কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার উপায় ২০২৫
২০২৫ সালে এসে, পরিবেশ-বান্ধব এবং টেকসই পরিষ্কার পদ্ধতির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এখানে কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার কিছু আধুনিক এবং কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলঃ
- নিয়মিত শুকনো মোছাঃ প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার শুকনো মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে আসবাবপত্র মুছুন। এটি ধুলো জমতে বাধা দেবে এবং আসবাবপত্রকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে।
- হালকা ভেজা কাপড়ঃ মাসখানেক পর পর হালকা গরম জলে নরম মাইক্রোফাইবার কাপড় ভিজিয়ে ভালোভাবে নিংড়ে নিন। তারপর আলতোভাবে আসবাবপত্র মুছে নিন। খেয়াল রাখবেন কাপড় যেন খুব বেশি ভেজা না থাকে, কারণ অতিরিক্ত জল কাঠের ক্ষতি করতে পারে। মোছার পর শুকনো কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন।
- কাঠের ক্লিনার ব্যবহারঃ বাজারে কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্লিনার পাওয়া যায়। গুণমান সম্পন্ন এবং কাঠের জন্য উপযুক্ত ক্লিনার ব্যবহার করুন। ক্লিনার ব্যবহারের আগে নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ে নিন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবহার করুন। ২০২৫ সালের আধুনিক ক্লিনারগুলো পরিবেশ-বান্ধব উপাদানে তৈরি হয় এবং কাঠের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে।
- ভিনেগার এবং জলঃ প্রাকৃতিক উপায়ে পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার এবং জলের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। সমান পরিমাণে ভিনেগার এবং জল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে নিন। তারপর আসবাবপত্রের উপর স্প্রে করে নরম কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছে নিন। ভিনেগার জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে এবং দাগ তুলতে সাহায্য করে।
- বেকিং সোডা পেস্টঃ বেকিং সোডা এবং জল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট দাগের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নরম কাপড় দিয়ে ঘষে তুলে নিন। বেকিং সোডা দাগ তোলার জন্য খুবই কার্যকর।
বিশেষ ধরনের দাগ দূর করার উপায় ২০২৫
কাঠের আসবাবপত্রে বিভিন্ন ধরনের দাগ লাগতে পারে, যেমনঃ জলের দাগ, তেলের দাগ, কালির দাগ, ইত্যাদি। প্রত্যেক ধরনের দাগ তোলার জন্য আলাদা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। ২০২৫ সালে, দাগ তোলার জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং পরিবেশ-বান্ধব উপাদানের ব্যবহার বাড়ছে।
- জলের দাগঃ জলের দাগ তোলার জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন। কম তাপে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে দাগের উপর তাপ দিন। দাগ শুকিয়ে গেলে নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এছাড়াও, সাদা ভিনেগার এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে দাগের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর মুছে ফেললেও কাজ হবে।
- তেলের দাগঃ তেলের দাগ তোলার জন্য বেকিং সোডা বা কর্ণস্টার্চ ব্যবহার করতে পারেন। দাগের উপর বেকিং সোডা বা কর্ণস্টার্চ ছড়িয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ পর নরম ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে নিন। এটি তেল শোষণ করে দাগ হালকা করতে সাহায্য করবে।
- কালির দাগঃ কালির দাগ তোলার জন্য রাবিং অ্যালকোহল ব্যবহার করতে পারেন। তুলোতে রাবিং অ্যালকোহল নিয়ে আলতোভাবে দাগের উপর ঘষুন। দাগ হালকা হয়ে গেলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। তবে, রাবিং অ্যালকোহল ব্যবহারের আগে অবশ্যই অপ্রকাশিত অংশে পরীক্ষা করে নিন।
- মোম বা চুইংগামের দাগঃ মোম বা চুইংগামের দাগ তোলার জন্য প্রথমে বরফ ব্যবহার করে সেটিকে শক্ত করুন। তারপর একটি ভোঁতা ছুরি বা স্প্যাচুলা দিয়ে আলতোভাবে তুলে ফেলুন। অবশিষ্ট দাগ তোলার জন্য সামান্য সাদা ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।
- স্ক্র্যাচ বা আঁচড়ের দাগঃ ছোটখাটো স্ক্র্যাচ বা আঁচড়ের দাগ ঢাকতে ওয়াক্স পেন্সিল বা কালার ম্যাচিং মার্কার ব্যবহার করতে পারেন। স্ক্র্যাচের দাগের সাথে মিলে যায় এমন রঙের পেন্সিল বা মার্কার দিয়ে দাগের উপর আলতোভাবে রঙ করুন।
কাঠের আসবাবপত্রে পালিশ করার নিয়ম
পালিশ কাঠের আসবাবপত্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং একে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত পালিশ করলে আসবাবপত্র দীর্ঘদিন পর্যন্ত নতুনের মতো থাকে। ২০২৫ সালে, পরিবেশ-বান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী পালিশের চাহিদা বাড়ছে।
পালিশ নির্বাচনের নিয়মঃ কাঠের ধরন এবং আসবাবপত্রের ফিনিশের উপর নির্ভর করে পালিশ নির্বাচন করতে হয়। বাজারে ওয়াক্স পালিশ, লিকুইড পালিশ, এবং স্প্রে পালিশ পাওয়া যায়। ওয়াক্স পালিশ প্রাকৃতিক কাঠের জন্য ভালো, লিকুইড পালিশ সাধারণ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত, এবং স্প্রে পালিশ কারুকার্য করা আসবাবপত্রের জন্য সুবিধা জনক।
পালিশ করার পদ্ধতিঃ
- প্রথমে আসবাবপত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকনো করে নিন।
- একটি পরিষ্কার কাপড় বা স্পঞ্জ-এ অল্প পরিমাণে পালিশ নিন।
- গোলাকার গতিতে আলতোভাবে পুরো আসবাবপত্রে পালিশ লাগান।
- কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, যাতে পালিশ কাঠের মধ্যে ভালোভাবে শোষিত হতে পারে।
- অন্য একটি শুকনো ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে অতিরিক্ত পালিশ মুছে ফেলুন এবং ঘষে উজ্জ্বলতা আনুন।
কতদিন পর পর পালিশ করবেনঃ সাধারণত, বছরে দুই থেকে তিনবার পালিশ করা যথেষ্ট। তবে, ব্যবহারের উপর নির্ভর করে পালিশের সময়সীমা পরিবর্তন হতে পারে। যদি আসবাবপত্র ফ্যাকাশে বা শুকনো লাগে, তবে পালিশ করার প্রয়োজন হতে পারে।
কাঠের আসবাবপত্র সংরক্ষণের টিপস
পরিষ্কার করার পাশাপাশি কাঠের আসবাবপত্র সংরক্ষণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সংরক্ষণের মাধ্যমে আসবাবপত্রের জীবনকাল বাড়ানো যায় এবং এদের সৌন্দর্য ধরে রাখা যায়।
- সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুনঃ সরাসরি সূর্যের আলো কাঠের রঙ নষ্ট করে দিতে পারে এবং কাঠ শুষ্ক হয়ে ফেটে যেতে পারে। আসবাবপত্রকে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন অথবা জানালায় পর্দা ব্যবহার করুন।
- আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণঃ অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা শুষ্কতা কাঠের জন্য ক্ষতিকর। ঘরে আর্দ্রতার সঠিক মাত্রা বজায় রাখুন। হিউমিডিফায়ার বা ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
- নিয়মিত ভেন্টিলেশনঃ ঘর ভালোভাবে ভেন্টিলেটেড রাখা জরুরি। নিয়মিত বাতাস চলাচল করলে আসবাবপত্র দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
- ভারী জিনিস সরাসরি না রাখাঃ আসবাবপত্রের উপর সরাসরি ভারী জিনিস রাখবেন না। ভারী জিনিস রাখলে কাঠের উপর চাপ পড়ে এবং দাগ সৃষ্টি হতে পারে। প্রয়োজনে সুরক্ষামূলক ম্যাট ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুনঃ কাঠের বলের দাম কত ২০২৫ – জানুন বিস্তারিত
- পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষাঃ কাঠের আসবাবপত্রে উইপোকা বা অন্যান্য পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। নিয়মিত আসবাবপত্র পরীক্ষা করুন এবং পোকামাকড়ের উপস্থিতি দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। বাজারে কীটনাশক স্প্রে পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে আসবাবপত্রকে রক্ষা করা যায়। প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে নিম তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফার্নিচার পরিষ্কারের সাধারণ ভুল এবং তার সমাধান
আসবাবপত্র পরিষ্কার করার সময় কিছু সাধারণ ভুল হয়ে থাকে, যা আসবাবপত্রের ক্ষতি করতে পারে। এই ভুলগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি আপনার মূল্যবান আসবাবপত্রকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
- বেশি জল ব্যবহারঃ কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার সময় অতিরিক্ত জল ব্যবহার করা একটি সাধারণ ভুল। বেশি জল কাঠকে ফুটিয়ে তুলতে পারে এবং এর ফিনিশ নষ্ট করতে পারে। সমাধান হল, কাপড় ভালোভাবে নিংড়ে শুধুমাত্র হালকা ভেজা কাপড় ব্যবহার করা এবং মোছার পর শুকনো কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নেওয়া।
- হার্শ ক্লিনার ব্যবহারঃ হার্শ ক্লিনার বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করলে কাঠের বার্নিশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং রঙের পরিবর্তন হতে পারে। সমাধান হল, কাঠের জন্য বিশেষভাবে তৈরি ক্লিনার ব্যবহার করা অথবা প্রাকৃতিক ক্লিনার যেমন ভিনেগার ও জলের মিশ্রণ ব্যবহার করা। ক্লিনার ব্যবহারের আগে অবশ্যই ছোট অংশে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
- সরাসরি স্প্রে করাঃ ক্লিনার সরাসরি আসবাবপত্রের উপর স্প্রে করলে তা কাঠের ক্ষতি করতে পারে। সমাধান হল, প্রথমে ক্লিনার কাপড়ে স্প্রে করে তারপর কাপড় দিয়ে আসবাবপত্র মোছা।
- পালিশ না করাঃ নিয়মিত পালিশ না করলে কাঠের ঔজ্জ্বল্য কমে যায় এবং এটি শুষ্ক হয়ে ফেটে যেতে পারে। সমাধান হল, বছরে দুই থেকে তিনবার নিয়ম করে পালিশ করা এবং সঠিক পালিশ নির্বাচন করা।
- ধুলো না ঝাড়াঃ নিয়মিত ধুলো না ঝাড়লে ধুলো জমে দাগ সৃষ্টি করতে পারে এবং কাঠের ফিনিশ নষ্ট করতে পারে। সমাধান হল, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার শুকনো কাপড় বা ব্রাশ দিয়ে ধুলো ঝেড়ে ফেলা।
দায়িত্বশীল এবং টেকসই পরিষ্কার পদ্ধতি
২০২৫ সালে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দায়িত্বশীল এবং টেকসই পরিষ্কার পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে আসবাবপত্র পরিষ্কার করা একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য ভালো, তেমনি আসবাবপত্রের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে।
- প্রাকৃতিক ক্লিনার ব্যবহারঃ রাসায়নিক ক্লিনার পরিহার করে ভিনেগার, লেবুর রস, অলিভ অয়েল, বেকিং সোডা ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন। এগুলো পরিবেশ-বান্ধব এবং কাঠের জন্য নিরাপদ।
- পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড় ব্যবহারঃ ডিসপোজেবল ওয়াইপস বা টিস্যু পেপার ব্যবহারের পরিবর্তে মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করুন যা ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা যায়। এটি বর্জ্য কমাতে সাহায্য করবে।
- কম জল ব্যবহারঃ পরিষ্কার করার সময় কম জল ব্যবহার করুন। এটি জল সাশ্রয় করবে এবং কাঠের ক্ষতিও কম হবে।
- DIY ক্লিনার তৈরিঃ বাজারে উপলব্ধ ক্লিনার কেনার পরিবর্তে ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে নিজেই ক্লিনার তৈরি করুন। যেমনঃ ভিনেগার ও জলের মিশ্রণ, লেবুর রস ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ ইত্যাদি। এতে খরচ কমবে এবং পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে।
- টেকসই পালিশ নির্বাচনঃ পরিবেশ-বান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি পালিশ ব্যবহার করুন। ওয়াক্স পালিশ একটি ভালো বিকল্প, যা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি এবং কাঠের জন্য খুব উপকারী।
ঘরোয়া উপায়ে কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার উপায়
ঘরে থাকা সাধারণ উপকরণ দিয়েও কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করা সম্ভব। এই ঘরোয়া উপায়গুলো সহজলভ্য এবং পরিবেশ-বান্ধব।
- ভিনেগার ও জলঃ সমান পরিমাণে সাদা ভিনেগার ও জল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এটি সাধারণ পরিষ্কারের জন্য খুবই কার্যকর। ভিনেগার জীবাণুনাশক এবং দাগ তুলতে সাহায্য করে।
- অলিভ অয়েল ও লেবুর রসঃ অলিভ অয়েল এবং লেবুর রস মিশিয়ে পালিশ তৈরি করতে পারেন। অলিভ অয়েল কাঠকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং লেবুর রস দাগ ও ময়লা পরিষ্কার করে। এই মিশ্রণ কাঠের ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে।
- বেকিং সোডা পেস্টঃ বেকিং সোডা এবং জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কঠিন দাগ যেমন তেলের দাগ, কালির দাগ, ইত্যাদি তুলতে পারেন। পেস্টটি দাগের উপর লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নরম কাপড় দিয়ে ঘষে তুলে নিন।
- টি ব্যাগঃ ব্যবহৃত টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে কাজে লাগাতে পারেন। টি ব্যাগ গরম জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে সেই জল ঠান্ডা করে কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এটি কাঠের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সাহায্য করে।
কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কারে পেশাদার সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা
যদিও ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করা যায়, কিছু ক্ষেত্রে পেশাদার সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।
- মূল্যবান এবং পুরনো আসবাবপত্রঃ যদি আপনার আসবাবপত্র মূল্যবান বা পুরনো হয়, তবে সেগুলোর পরিষ্কার ও যত্নের জন্য পেশাদার সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। পেশাদার ক্লিনাররা সঠিক পদ্ধতি এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করে আসবাবপত্রের কোনো ক্ষতি না করে পরিষ্কার করতে পারে।
- ভারী দাগ এবং জটিল পরিষ্কারঃ কিছু দাগ খুব কঠিন হয় এবং ঘরোয়া উপায়ে তোলা সম্ভব হয় না। যেমন - পুরনো কালির দাগ, রাসায়নিক দাগ, ইত্যাদি। এই ধরনের দাগ তোলার জন্য পেশাদার ক্লিনারদের অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ সরঞ্জাম থাকে।
- পালিশ এবং রিস্টোরেশনঃ আসবাবপত্রের পালিশিং বা রিস্টোরেশনের জন্য পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত। বিশেষ করে পুরনো আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে সঠিক পালিশিং এবং রিস্টোরেশন খুবই জরুরি, যা শুধুমাত্র পেশাদাররাই করতে পারে।
- সময় এবং সুবিধার অভাবঃ যদি আপনার হাতে সময় কম থাকে বা আপনি ঝামেলা এড়াতে চান, তবে পেশাদার ক্লিনারদের সাহায্য নিতে পারেন। তারা দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে আপনার আসবাবপত্র পরিষ্কার করে দিতে পারবে।
উপসংহার – কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করার উপায় ২০২৫
কাঠের আসবাবপত্র আপনার ঘরের সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যের অংশ। ২০২৫ সালে এসে, আধুনিক এবং পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে আপনার কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার এবং যত্ন নেওয়ার জন্য এই বিস্তারিত গাইডটি অনুসরণ করতে পারেন। নিয়মিত পরিষ্কার, সঠিক পালিশ, এবং সংরক্ষণের মাধ্যমে আপনি আপনার আসবাবপত্রকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নতুনের মতো রাখতে পারবেন। দায়িত্বশীল পরিষ্কার পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হন এবং আপনার আসবাবপত্রের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। প্রয়োজন অনুসারে ঘরোয়া পদ্ধতি অথবা পেশাদার সাহায্য গ্রহণ করে আপনার আসবাবপত্রের সর্বোত্তম যত্ন নিশ্চিত করুন।
AllWoodFixes নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url